Organic Foods

খেজুর কেন খাবেন?

ইসলাম ধর্মে খেজুরকে অন্যান্য সকল ফল থেকে আলাদা মূল্যায়ন করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন শরিফে ২৬ বার খেজুরের কথা বলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম অনেক সময় শুধু খেজুর খেয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন এমন ঘটনাও কিতাবে পাওয়া যায়।

খেজুরের পুষ্টিগুণঃ

খেজুর বহুগুণ সমৃদ্ধ ফল। প্রাকৃতিক আঁশের আধিক্য থাকায় এর উপকারিতা ও গুরুত্ব অনেক। খেজুর ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। খেজুরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তেল, ক্যালসিয়াম, সালফার, আইরন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান যা সুস্বাস্থের জন্য অতি দরকারি। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়, চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।

খেজুর কেন খাবেনঃ

হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতায়ঃ খেজুর হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তপ্রবাহে গতি সঞ্চার করে।

হাড় গঠনেঃ ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।

ক্ষুধার তীব্রতা কমেঃ অল্প কয়েকটা খেজুর খেলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়। এই ফল পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।

শর্করার ঘাটতি পূরণঃ শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। ফলে মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ডি-হাইড্রেশনেঃ খেজুর ডি-হাইড্রেশন রোধ করে।

শক্তি সঞ্চারেঃ  ইফতারে যাঁরা শরবত খান না, তাঁরা কয়েকটি খেজুর খেয়ে শরবতের চেয়েও বেশি শক্তি  পেতে পারেন।

সোডিয়াম, পটাশিয়ামের সমতায়ঃ শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।

শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধকঃ খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তিবর্ধক। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিসহ হজম শক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।

পাতলা পায়খানা বন্ধেঃ খেজুরে বিদ্যমান পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ও অন্যান্য খনিজ লবণ পাতলা পায়খানায় উপকারী। এ ছাড়াও খেজুরের বীজ পাতলা পায়খানা বন্ধে কার্যকর।

বিষক্রিয়া বন্ধেঃ আজওয়া খেজুর বিষের কার্যক্ষমতা কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর- তা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

শুক্রাণু বৃদ্ধিঃ খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএর গুণগতমান বৃদ্ধি করে এবং অণ্ডকোষের শক্তি বাড়ায়।

যাঁদের জন্য খেজুর ক্ষতিকরঃ

যাঁদের ডায়াবেটিস এবং শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি রয়েছে, তাঁদের বেলায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খেজুর খাওয়া উচিত।

খেজুর সম্পর্কে কয়েকটি হাদিসঃ

১ম হাদিসঃ সায়ীদ (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখতে তাশরিফ আনলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র হাতের শীতলতা আমার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন ‘তুমি অন্তরে কষ্ট অনুভব করছ। তুমি হারেস ইবনে কালদাহ সাকি্বফীর কাছে যাও। কারণ সে একজন চিকিৎসক। সে যেন মদিনা থেকে সাতটি আজওয়া খেজুর নিয়ে বীজসহ পিশে তোমার মুখে ঢেলে দেয়।’ -আবু দাউদ

২য় হাদিসঃ আজওয়া খেজুর বিষের কার্যক্ষমতা কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। এই সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)  এরশাদ ফরমাইছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল। এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে।’ তিরমিজি, মিশকাতুল মাসাবিহ।

৩য় হাদিসঃ মা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসিস পছন্দ করতেন।” হাসিস তিনটি উপাদানযোগে প্রস্তুত হয়, (১) খেজুর (২) মাখন (৩) জমাট দই। এটা শারীরিক, মানসিক শক্তি ও যৌনশক্তি বর্ধক।

৪র্থ হাদিসঃ সা’আদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সে দিন বিষ এবং জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।- বুখারি শরিফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *